বর্তমানে শিক্ষার্থীদের স্টাইলিশ চুল নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে। বেশিরভাগ সচেতন মানুষ এই স্টাইলিশ চুলের বিপক্ষে। কিছু মানুষ বলছে স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা, চুল স্টাইল করাটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটাতে আঘাত হানা ঠিক না। আসলে জরিপ কি বলে? যেহেতু আমি একজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান সেহেতু আমার কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা সহজ। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমি এখন পর্যন্ত যতজন চুলের স্টাইল করা শিক্ষার্থী পেয়েছি তাদের ১০০% শিক্ষার্থী নৈতিক আচরণে পরিপূর্ণ নয়। তাদের কেউই পড়ালেখায় মনযোগী নয়। ইভটিজিং এ তারাই এগিয়ে। আড্ডাবাজি, মোবাইলে আসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, গার্লফ্রেন্ড খুঁজতে ও ম্যাসেঞ্জারে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত। চ্যাটিং এর ভাষা পড়লে লজ্জায় মাথা নিচু করতে হয়। এমনকি এদের অনেককে পেয়েছি যারা মাদকাসক্ত। এরাই দেখবেন বেপরোয়া বাইক চালায়।
দেখুন মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য কিন্তু তার ও তার পরিবারের রুচিবোধের প্রকাশ। যদি কোনো মেয়ে হাফ প্যান্ট ও টি শার্ট পরে বাহিরে চলাচল করে, সেটাকে আমাদের সমাজ মেনে নেয় না। কারণ, আমাদের দেশের পোষাকের সংস্কৃতি কিন্তু এটা নয়। এখন যদি কেউ বলেন এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা, তাহলে তো সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। সুতরাং স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের দোহাই দিয়ে স্বাধীন ভাবে চলব, তা বলার সুযোগ নেই। এমনটি হলে দেশে আইনের দরকার ছিল না, সবাই স্বাধীন দেশে যা খুশি তাই করতাম। তাতে কী পরিনতি হত, একবার ভেবে দেখুন। আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, চুলের এই স্টাইলগুলো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। আপনি সেলুনের দোকানে গিয়ে দেখবেন, চুলে স্টাইলের যত ছবি আছে সবগুলোই বিদেশী পোস্টার। এমন যদি হত যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা স্টাইল করে চুল রেখে শৃংখলাবদ্ধ জীবন যাপন করছে, তাহলে সবাই এটাকে সাধুবাদ জানাতো। কিন্তু যখন তার উল্টো হচ্ছে, তখন এটাকে সাধুবাদ জানানোর কোনো সুযোগ নেই।
এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার চুলের স্টাইলটা কার নকল। জবাবে বলে, “স্যার, এটা নেইমার স্টাইল”। যখন তাকে বললাম, নেইমার খেলে সুনাম অর্জন করার পরেই তাকে তুমি চেন এবং সে তোমার প্রিয় খেলোয়াড়। কিন্তু তুমি কি সেই জায়গায় পৌঁছেছো? সেই সুনাম অর্জন করেছো? আগে নেইমারের খেলা, তার পর চুলের স্টাইল। চুলের স্টাইলের কারণে সে খেলোয়াড় হয় নি। তখন তাদের আর জবাব থাকে না। দেখুন, এইচ এস সি পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী কিন্তু টিনএজ বয়সের। এ সময়ে নেতিবাচক বিষয়ে তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। সেখানে তাদের কে ভুল পথ থেকে বের করে আনা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিশেষ করে পিতা মাতাকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে, এরপর শিক্ষক। ভার্সিটি লাইফে যদি কোনো শিক্ষার্থী চুলের স্টাইল করে তাহলে খুব একটা ক্ষতির কিছু দেখি না। কারণ, তারা শিশু থেকে একজন ভোটার ও নাগরিকে রূপান্তর হয়। ফলে পিছলে পড়ার ভয় কমে যায়। কিছুদিন পরে নিজেই তার রুচিবোধের পরিবর্তন করে। কারণ সে জানে, এই চুল নিয়ে চাকুরির ভাইভা দিলে কি অবস্থা হয়।
তাই সময়ের আগে যা পাকে তাকে অকালপক্কই বলা হয়। সময়ের আগে কোনো কিছুই ভাল নয়। আপনার সন্তান ক্লাস নাইনে এসেই কোনো মেয়েকে পছন্দ করলে নিশ্চয় আপনি তাকে বিয়ে দেন না। কারণ আপনি জানেন, এটা তার জন্য ক্ষতিকর। ঠিক তেমনি আপনি যদি ভালরুচিসম্পন্ন ব্যক্তি হোন, তাহলে আপনার সন্তানকে শিশু বয়সে আপনার রুচিবোধ দিয়েই মানুষ করুন। কারণ সে আয় করে না, আপনার অর্থের ওপরেই সে নির্ভর করে। দেখবেন সে যখন নিজে কর্ম করে আয় করবে, তখন সে তার নিজের রুচিবোধের প্রকাশ করবে।
আমার সাথে একমত না হলে, ভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তবে আক্রমনাত্বক হবেন না, কেননা, সেটাও আপনার রুচিবোধের প্রকাশ।
ধন্যবাদ।