প্রথমেই বলে রাখি, এই প্লান অনুযায়ী কেউ ট্যুর দিতে চাইলে সময়ের সর্বোত্তম ব্যাবহার এবং পার্সোনাল গাড়ি থাকতে হবে বা মাইক্রো ভাড়া নিতে হবে। কেননা লোকাস বাস এবং অটোতে করে আপনি ২-৩ টা জমিদারবাড়ির বেশি দেখতে পারবেন না। গাড়ির কথা শুনে যদি কারো মাথায় আকাশ ভেঙে পরে, তাকে বলবো ‘পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পরার জন্যে।
যেসব জমিদারবাড়ি দেখতে পাবেনঃ
১.মহেড়া জমিদারবাড়ি
২. করটিয়া জমিদারবাড়ি
৩. দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি
৪. পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
৫. বালিয়াটি জমিদারবাড়ি
যেভাবে যাবেনঃ
হায়েস রিজার্ভ নিয়ে সকাল ৬-৭ টায় মাঝেই রওনা দিতে হবে। মিরপুর, আশুলিয়া, বাইপেল হয়ে যানজট ঠেলে টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদাবাড়ি পৌছাতে সকাল ১০-১১ টা বেজে যাবে। হতাশ হবার কোন কারন নেই এই ভেবে যে সবগুলি জায়গা কভার করা যাবেতো? এত ভাবাভাবির টাইম নেই, ভাবতে গেলে ভাবতে ভাবতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। গাড়ি পার্ক করে ৫০ টাকা করে টিকিট কেটে ভিতরে চলে যান। বাড়ি দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায় অবস্তা। ছবি তোলার জন্য উত্তম স্থান, পুরো পরিবেশটা অসাধারণ। তবে একটা জিনিস খারাপ লাগতে পারে, এখানে প্রকৃতির চাইতে কৃত্তিমতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জমিদারবাড়িটি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যাবহৃত হওয়ায় এর বেশিরভাগ জায়গাই সংরক্ষিত। আপনি চাইলেই যেখানে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। এখানে ১ ঘন্টা ঘুরে বেড় হয়ে স্থানীয় হোটেলে নাস্তা করে গাড়িতে উঠে করটিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। যেতে সময় লাগবে আধঘণ্টার মত।
করটিয়া জমিদারবাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই আপনার শরীর মন শীতল হয়ে যাবে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এটাই হবে। এতসুন্দর, পরিচ্ছন্ন আর গোছানো পরিবেশ আপনি লাস্ট কবে দেখেছিলেন মনে করতে পারবেন না। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই লাল রঙ এর প্রাসাদের সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। তবে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না কারণ এখানে মানুষ বাস করে। বাড়ির পিছনে বিশাল পুকুর আছে। পুকুর পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন বিশাল আকারের আরেকটা পুকুর। সেই পুকুরের অপর পার্শে রয়েছে অন্দরমহল। যা এখন স্কুল হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। পুরো ভবনের ভেতর থেকে বাহির পর্যন্ত ঘুরে দেখেতে পাবেন যদি স্কুল বন্ধের দিন যান। প্রত্যেকটা রুমে ঢুকে দেখেতে পারবেন। সেখানে ঘন্টা খানেক থেকে বেড়িয়ে পরুন দেলদুয়ার জমিদারবাড়ির উদ্দেশ্যে। দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি পৌছাতে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে।
দেলদুয়ার বাজারে পৌছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন। তারপরে হেটে জমিদারবাড়িরর দিকে চলে যান। ৫ মিনিটের মত সময় লাগবে। অন্যান্য জমিদারবাড়ির তুলনায় দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি অনেক ছোট হলেও সৌন্দর্যের কোন কমতি নেই। এখানে বেশি সময় লাগবে না। ফটোসেশন আর ঘুরে দেখতে ২০-২৫ মিনিটই যথেষ্ট। সেখান থেকে বেড়িয়ে এবার যাত্রা পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি। সময় লাগবে ৪০-৬০ মিনিট।
পাকুটিয়া জমিদারবাড়িটার কয়েকটা ভবন। কোনটা কি ভবন বোঝা মুশকিল। এই ভবনগুলি অনেক পুরাতন তাই সিড়ি বেয়ে ওঠার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। এখানে কিছু ভবনে মানুষ এখনো বাস করে। তবে পরিত্যক্ত ভবনের ভিতর-উপর সব ঘুরে দেখতে পারবেন। এখানে আধাঘণ্টা ঘুরে ফটোসেশন শেষ করে গাড়িতে চরে বসুন। এবারের গন্তব্য বালিয়াটি জমিদারবাড়ি।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নিয়ে আসলে কিছু বলার নেই। কারণ যাই বলবো, এর সৌন্দর্য বর্ণনা করা সম্ভব না। আঠারো শতকের প্রথম ভাগ থেকে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বালিয়াটির জমিদাররা ওই এলাকা শাসন করেন। এ সময়ে তাঁরা নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করেন। বালিয়াটি জমিদারবাড়ি সেগুলোর অন্যতম। আঠারো শতকের মধ্যভাগে জমিদার গোবিন্দরাম শাহ বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। এটাকে জমিদারবাড়ি না বলে রাজপ্রাসাদ বললেই বেশি ভালো হতো। বালিয়াটিতে থাকুন সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে জমিদারবাড়ির মূলফটকের সামনেই এক চাচা পিয়াজু বানায়। তার পিয়াজু খেতে ভুলবেন না কিন্তু। এরপরে আবার চিরচেনা শহর ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। ঢাকায় পৌছাতে সময় লাগবে ২/৩ ঘন্টা, যা যানজটের উপর নির্ভশীল।
খরচের হিসাবঃ
একটা হায়েস ভাড়া নিবে ৫০০০-৫৫০০ দামাদামি করে নিতে হবে।
বসতে পারবেন ১২ জন।
মহেড়ায় প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।
বালয়াটিতে প্রবেশ ২০ টাকা।
সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলে আনলিমিটেড পিয়াজু আর টাংগাইলের মিষ্টি খাওয়া। সারাদিনে ৫-৬ বার চা, নাস্তা। গাড়ি পার্কিং, ড্রাইভারের সারাদিনের খাবার। প্রবেশ ফি ইত্যাদি খরচ মিলে ৮০০-৯০০ টাকার মাঝেই হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ চলমান গাড়িতে নেট আপ-ডাউন করায় ম্যাক্সিমাম জায়গায় লোকেশন ধরতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাদের শেষ ভরসা হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। আমরা রাস্তার পাশে হাটা মানুষজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে সব জায়গায় ঠিকমতো পৌছে যেতে পারবেন। তাই যেখানেই যান না কেনো, স্থানীয় মানুষজনের সাথে ভালো ব্যাবহার করুন। কেননা তারাই আপনাকে সবচেয়ে বেশি হেল্প করবে।
ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। মনে রাখবেন, আপনার একটু সচেতনতাই পারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে।
আপনারা চাইলে গৃহত্যাগী’র ট্র্যাভেল গ্রুপের সাথে বাংলাদেশ আনাচে কানাচে ভ্রমণ দিতে পারেন।
গৃহত্যাগীর ফেসবুক গ্রুপঃ https://www.facebook.com/groups/Grihotagi/
(এছাড়াও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন)